ট্রাম্প-মোদির আলোচনায় যেসব বিষয় প্রাধান্য পেতে পারে
ওয়াশিংটনে ২০১৭ সালে ট্রাম্প ও মোদির প্রথম বৈঠকের পর থেকে তাদের একাধিক সমাবেশে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। এই যৌথ উপস্থিতির হাত ধরেই তাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হয়েছে। এই তালিকায় হিউস্টন ও আহমেদাবাদের বিশাল সমাবেশও রয়েছে। দুই নেতার সম্পর্কের রসায়নের নেপথ্যে রয়েছে তাদের অভিন্ন বিশ্বদর্শন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং চীনকে মোকাবেলা করার পারস্পরিক কৌশল।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই ভারতের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি কখনো নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেননি। আর তাই প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের সময় তারা সম্ভবত মার্কিন-ভারতীয় কৌশলগত অংশীদারির পরবর্তী পদক্ষেপগুলোকে ম্যাপ করার বিষয়ে ব্যস্ত থাকবেন। দুই দেশের এই অংশীদারি ইতিমধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, সফরকালে নরেন্দ্র মোদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য ছাড়াও শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃত্ব ও ভারতীয়-মার্কিন সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন। ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক যানবাহনের সেক্টরের আয়তন বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহী নরেন্দ্র মোদি। যদি ইলন মাস্ক ভারতে টেসলার একটা কারখানা স্থাপন করেন, তাহলে তিনি খুশিই হবেন।
বাণিজ্য ও শুল্ক
তবে ট্রাম্প-মোদি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব ও কৌশলগত অংশীদারির বিষয়ে আলাপ-আলোচনাকে ঢেকে দিতে পারে এমন একটা বাস্তবতা, যেখানে দুই পক্ষই লেনদেনের বিষয়টাকে প্রকাশ্যে আনবেন।
ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ১০৪ জন নথিহীন ভারতীয়কে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব আগাম পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো থেকে বিরত রাখা এবং বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে উত্তেজনার শঙ্কা কমানো।
এর পরও অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্য ঘাটতি (ট্রেড ডেফিসিট) হ্রাস করতে মোদিকে শুল্ক আরো কমানোর কথা বলতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি চার হাজার ৬০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে একটা বাধা হলেও সুযোগও হয়ে উঠতে পারে। অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাতে পারেন নরেন্দ্র মোদি, যার উদ্দেশ্য হবে দুই পক্ষের শুল্কই হ্রাস করা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নয়াদিল্লি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় ট্রাম্প প্রশাসন যে আলোচনায় বেশি আগ্রহী সেটাও প্রমাণিত হতে পারে। জো বাইডেনের আমলে নতুন বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে কঠোর পরিবেশগত ও শ্রম-সম্পর্কিত শর্ত আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার নরেন্দ্র মোদিকে আরো নথিহীন ভারতীয়কে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলতে পারেন। কিছু তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীন অভিবাসী গোষ্ঠীর তালিকায় তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী এবং এই সংখ্যাটা সাত লাখ ২৫ হাজারের কাছাকাছি। কাজেই এই বিষয়টা নয়াদিল্লির পক্ষে একটা কঠিন ও স্পর্শকাতর ইস্যু হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে ফেরত পাঠানো অবৈধ অধিবাসীদের সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ভারতীয় নাগরিকদের হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরানোর ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
Post a Comment