Top News

উধাও ক্ষমতার কারিগরেরা: হাসিনার ঘনিষ্ঠরা কে কোথায় আছেন?


 উধাও ক্ষমতার কারিগরেরা: হাসিনার ঘনিষ্ঠরা কে কোথায় আছেন?


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং স্থানীয় আদালতগুলোতে আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ পরিসরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবস্থান এখনও অজানা রয়ে গেছে।

গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত এবং অসংখ্য আহত হওয়ার পর এই হাই-প্রোফাইল নেতারা উধাও হয়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলোর ক্ষোভ বাড়াচ্ছে; তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার না পাওয়ার অনুভূতি তীব্র হচ্ছে। 

তবে ট্রাইব্যুনাল বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারেনি। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে শত শত হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রয়েছে।

হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের গুটিকয়েক নেতা এবং প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি—যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নিচের পর্যায়ের সদস্য।

বর্তমানে আটক হাসিনার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, ফরহাদ হোসেন, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শামসুল হক টুকু, টিপু মুনশি, জুনাইদ আহমেদ পলক এবং শাহজাহান খান। এছাড়া ডজনখানেক সংসদ সদস্যও আটক হয়েছেন।

তবে আরও অনেক সিনিয়র নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছে, দলটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। 

ধারণা করা হচ্ছে, অনেকে ভারতে লুকিয়ে আছেন। আর যাদের বিদেশি ভিসা বা দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা ইউরোপ বা অন্যান্য নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে হাসিনা তার দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

'মূলত ৩০-৪০ জন এমপি ও সাবেক মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এই যোগাযোগ হয়,'—ভারতীয় মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন জানিয়েছেন সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ এফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। নাছিমও ভারতে রয়েছেন বলে মনে করা হয়।

পলাতক মন্ত্রীরা

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। দলটির অন্তত তিনটি অভ্যন্তরীণ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর কাদের যশোর ও সিলেটে দুটি ভিন্ন স্থানে লুকিয়ে আছেন বলে গুজব ছিল বলে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান।

'তবে আমরা জানতে পেরেছি যে তিনি আর বাংলাদেশে নেই; সম্ভবত এখন ভারতে রয়েছেন,' ওই কর্মকর্তা বলেন। 'তিনি সম্ভবত আগস্টের শেষের দিকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যার কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।'

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন বলে মনে করা হয়। আওয়ামী লীগের একজন সদস্য দাবি করেন, 'কেউ কেউ বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও বলেন, তিনি এখন একটি ইউরোপীয় দেশে আছেন।'

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শহিদ আবু সাঈদকে 'মাদকাসক্ত' বলে তুমুল সমালোচিত হওয়া আরাফাত ১১ নভেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের হাজির হন। নিজের ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্টে নিয়মিত পোস্ট শুরু করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে পোস্ট দেন তিনি।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সম্প্রতি কলকাতার ইকো পার্কে দেখা গেছে। সূত্রমতে, তিনি দিল্লি বা দুবাইয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

বিক্ষোভের সময় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটা নিরাপত্তা অভিযানগুলো আসাদুজ্জামান খানের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে তিনি একটি ভারতীয় পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অস্পষ্ট রয়ে গেছে।

সূত্রমতে, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সেপ্টেম্বর মাসে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালান। তিনি একজন ভারতীয় আইটি ব্যবসায়ীর সহায়তায় পালান বলে দাবি করেছেন ভারতে আত্মগোপনে থাকা দলের এক নেতা। 

ত্রিপুরা পার হওয়ার পর হাছান মাহমুদ দিল্লিতে যান শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রচেষ্টায়। কয়েকবার হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি বেলজিয়ামে চলে যান। সেখানে তার পরিবার বসবাস করে। হাছান মাহমুদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। 

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে লন্ডন, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনার জন্য বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে আছেন বলে নিশ্চিত করেছে।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। এছাড়া সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমানকেও যুক্তরাজ্যে দেখা গেছে।

সাবেক এমপি এবং দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সম্প্রতি দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, দলের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ শীর্ষ নেতা বর্তমানে বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। 

তবে তারা কোন আইনি স্ট্যাটাসে বিদেশে অবস্থান করছেন, সে সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করেননি।

মন্ত্রিসভার বাইরের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা

আরেক বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে নভেম্বরে দিল্লিতে এবং পরে ডিসেম্বরে দুবাইয়ে দেখা গেছে। স্থানীয় বাংলাদেশি প্রবাসীরা ওইসব জায়গা থেকে তার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন।

এদিকে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কয়েকজন পরিচিত সদস্যও ভারতে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান দুজনেই ভারতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সাদ্দাম ডিসেম্বরে একাধিক ভারতীয় মিডিয়া টক শোতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকেও সম্প্রতি কলকাতায় ভারতীয় মিডিয়ায় দেখা গেছে।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post